Monday, June 8, 2020

বাংলা সাহিত্যের অমূল্য রত্ন পুতুল নাচের ইতিকথা

"নদীর মতো নিজের খুশিতে গড়া পথে কি মানুষের জীবনের স্রোত বহিতে পারে? মানুষের হাতে কাটা খালে তার গতি, এক অজানা শক্তির অনিবার্য ইঙ্গিত। মধ্যাকর্ষনের মতো যা চিরন্তন, অপরিবর্তনীয়।"

মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা তার এই উপন্যাসটি বাংলা ১৩৪১ সালের পৌষ থেকে ১৩৪২ এর অগ্রাহায়ন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় "ভারতবর্ষ" পত্রিকায়। পরবর্তীতে ১৯৩৬ ইং সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। বইটি পড়ার পর থেকে অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য হাত নিশপশ করছিলো, তাই কলম ধরে বসেই পড়লাম!

বইঃপুতুল নাচের ইতিকথা 

লেখকঃ মানিক বন্দোপাধ্যায় 

প্রথম প্রকাশঃ ১৯৩৬


মানিক বন্দোপাধ্যায় 


কাহিনি সংক্ষেপঃ


খালের ধারে প্রকান্ড বটগাছের গুড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাড়াইয়া ছিলো। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন৷ হারুর মাথায় কাচাপাকা চুলতার বসন্তের দাগভরা রুক্ষ চামড়া ঝলসিয়া পুড়িয়া গেল। সে কিন্তু কিছুই টের পাইলো না।

উপন্যাসের শুরুতেই মৃত্যুর এমন জাক-জমক-পূর্ন বর্ননা মানিক বন্দোপাধ্যায়ের এই লেখাটিকে পাঠকমনে বিশেষ জায়গা দিয়েছে।
উপন্যাসের পটভূমি গাওদিয়া গ্রাম। গাওদিয়া গ্রামের ছেলে শশী, উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট। গাঁয়ের ছেলে হলেও শহরে লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়েছে সে। নিজ গাঁয়েই প্র্যাকটিস শুরু করেছে। তার গাঁয়ের জীবন, সেখানকার মানুষের সাথে সম্পর্ক, জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি- এসব ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে পুতুলনাচের ইতিকথা।
শশীর মন দ্বীমুখী। সে নিজেই জানেনা গায়ে ডাক্তারী করবে নাকি শহরে চলে যাবে। সে মনে মনে কল্পনা করে চলে যায় কলকাতায় ডাক্তারী করতে। আবার নিজস্ব জগতে ফিরে আসে মতিকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে। কিন্তু সে মতিকে ভালোবাসে সেটা তার ইগোর কারনে বলতে পারেনা।আবার দূরেও থাকতে পারেনা।

কিন্তু হঠাৎ করেই শশীর কলেজজীবনের বন্ধু কুমুদ যখন মতিকে 'দখল' করে নেয়, বিয়ে করে দূরে কোথাও চলে যায়, তখন শশীর একটি আশ্রয় ছিন্ন হয়ে যায়। মতিকে পাওয়ার জন্য সে এতটাই উতলা হয়েছিল যে সে ভাবে, নিজেই মতিকে বিয়ে করবে। এ কথা যখন সে কুসুমকে জানায়, কুসুম তা হেসে উড়িয়ে দেয়। কুসুম এক রহস্যময় মানবী। মতিকে হারানোর ভয় কিছুটা প্রশমিত হয় কুসুমের মাঝে! শশী নিজেও জানেনা কুসুমকে সে ভালোবাসে কিনা! সেটা খোলাসা হয় যখন কুসুম গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে চায়।  সে কুসুমকে তালপুকুরে ডেকে যখন তার মনে কথা বলে তখন কুসুমও তাকে প্রত্যাখান করে। বলেঃ

"কেন যাব?…… আপনি বুঝি ভেবেছিলেন যেদিন আপনার সুবিধে হবে ডাকবেন, আমি অমনি সুড়সুড় করে আপনার সঙ্গে চলে যাব? কেউ তা যায়?”

এখন শশীর গ্রামে থাকার কোন কারনই নেই,কুসুমও নেই মতিও নেই।  সে তার বাবাকেও পছন্দ করেনা।তাই চায় গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে, কিন্তু সেই যে নিয়তি!  তাকে আটকে রাখে।যাদব একটি হাসপাতাল তৈরীর খরচ দিয়ে যায় মৃত্যুর আগে যা পুরোটাই শশী ডাক্তারের নামে।এই বাধন, এই দায়িত্ব ছেড়ে শশী যাবে কোথায়?
এও যেন এক পরিহাস! শেষ পর্যন্ত যাদবই যেন শশীর জীবনে পুতুলনাচের নিয়ন্ত্রক হিসেবে আবির্ভূত হয়। জীবনরূপী এই পুতুলনাচকে বরণ করে নিতে হয় শশীকে। পুতুলের সুতো ছেঁড়া আর তার হয় না।

উপসংহারঃ


উপন্যাসটির শেষে শশীর আপাত এই পরিণতি দেখে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগবে নিজের জীবন নিয়েও- জগৎসংসারে আমরা সবাই যে এক পুতুলনাচের চক্করে বাঁধা পড়েছি। এ থেকে মুক্তির কি কোনো উপায় নেই?

কেন পড়বো পুতুল নাচের ইতিকথাঃ


বাংলা সাহিত্যের এই রত্নটির মাধ্যমে মানিক বন্দোপাধ্যায় বেচে থাকবেন চিরদিন। এটি পড়লে জীবনের টানাপোড়েন অনুভব করা যাবে একদম মূল থেকে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখাটিতে গ্রাম্য জীবন পুরোপুরিভাবে ফুটে উঠেছে যা প্রত্যেক বাঙ্গালির জীবন সংগ্রামের সারসংক্ষেপ।


No comments:

Post a Comment